হামহাম ঝর্ণা ভ্রমন।

বন্ধুরা মিলে হঠাৎ করে সিধান্ত নেই ঘুরতে যাবো। অনেক দিন ঘুরতে যাইনি। কোথায় যাবো তা নিয়ে সিধান্তহীনতায় ভুগলাম সবাই। সবাই মিলে ঠিক করলাম মৌলভিবাজার যাবো। নেটে ঘুরে হামহাম ঝর্ণা অনেক ছবি, ভিডিও দেখলাম। তাই হামহামকে ঠিক করা হলো। বন্ধু অভির ফুফাতো ভাই রকির বাসায় উঠবো। ২০১৫ সালে পহেলা নভেম্বর আমারা যাত্রা শুরু করি। আজকে আপনাদের হামহাম জয়ের সেই গল্পই শুনাবো। 






ট্রেনে আমাদের নামতে হলো শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল শহরটা অসাধারন। রাস্তার চারপাশে চা বাগান। পরিষ্কার পরিছন্ন শহর। ট্রেন থেকে নেমে আমরা চলে গেলাম রকি ভাইয়ের বাসায়। সারাদিন জার্নির কারনে তাড়াতাড়ি সবাই ঘুমিয়ে পরলাম। পরদিন খুব সকালে আমরা রওনা দিলাম হামহামের উদ্দেশ্যে।

সকালে পানসী হোটেলে নাস্তা করে আমরা যাত্রা শুরু করলাম তার আগে দরকারী যা যা (যেমন পানি, শুকনো খাবার) কিনার সব কিনে নিলাম। হামহাম যেতে হলে প্রথমে আপনাকে সিএনজিতে যেতে হবে। সাধারনত দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগে সিএনজি তে। এরপর আবার পায়ে হাঁটা পথ। পায়ে হেঁটা তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় হামহাম যাওয়া যায়। আমারা একটা সিএনজি ভাড়া কলাম। সাধারনত ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যেই সিএনজি পাবেন। সিএনজি যাওয়া এবং আসার জন্য একবারেই ভাড়া করতে হয়।

সকাল ৯টায় রওনা দিয়ে আমরা ১১.৩০টায় আমাদের সিএনজি পৌছালো। এর পার পায়ে হাঁটা পথ। সিএনজি থেকে নেমে আমরা গাইড ঠিক করলাম। এখানকার গাইড তুলনামূলক অনেক কমেই পাবা যায়। আমরা দু'শো টাকা দিয়ে গাইড ঠিক করলাম। তার পর নাম এন্ট্রি করে হামহামের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু হলো।



ঝিরি পথ


হামহাম যাবার জন্য সাধারনত দুটি পথ ব্যবহার করা হয়। একটি ঝিরি পথ আরেকটি পাহাড়ি পথ। ঝিরি পথে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে। পাহাড়ি পথে দুই ঘন্টায় যাওয়া যাবে। আমরা ঝিরি পথেই গিয়ে ছিলাম। এই পথে পাওয়াটা একটু কষ্টা কর। একটু সাবধানে যেতে হয়। তবে পুরো বনের আসল সৌন্দর্যটা আপনি দেখতে পাবেন ঝিরি পথেই। এ পথে যাওয়াটা অনেকটা এডভেঞ্চারের মতো। জিরি পথে মাঝে মাঝে অনেক খাত আছে। আপনাকে সাবধানে হাঁটতে হবে। একটা পা পিছলালেই পানিতে। সাতাঁর না জানা থাকলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।





ঝিরি পথের দু'পাশের পাহাড়, বড় বড় গাছপালা, পাখির ডাক আপনার নজর কাটবে। ঝিরি পথে সাধারনত কম মানুষরা আসে নাই এ পথে নিজেদের মতো করে মজা করে যাওয়া যায়। হাঁটার সময় একটু সাবধানে হাঁটতে হবে। কারন এ পথে প্রচুর ছোট ছোট পাথর থাকে। যা যে কোন সময় পায়ে ব্যাথা পাবার কারন হয়ে দাড়াঁতে পারে।


গাইড বিকাশ ভাইয়ের সাথে আমরা


হামহামে যাবার সময় আপনারে কয়েকটা ছোট পাহাড় টপকাতে হবে। হাঁটতে হাটকে আমারা প্রায় হামহামের কাছাকাছি চলে আসলাম। দূর থেকেই আপনি ঝর্ণার শব্দ পাবেন। শব্দ শুনেই আপনি বুঝতে পারবের আপনি হামহাম ঝর্ণার কাছাকাছি চলে এসেছেন।



হামহাম ঝর্ণা

হামহামে যাবার সময় খাবার কিনে নিয়ে যাওয়াই ভালো। যেহেতু আমাদের দেশের পর্যটক স্পট গুলোতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়না তাই সব কিছু নিজেদের সাথে রাখাই ভালো। এখানে কিছু দোকান আছে তবে এখানে ভারী খাবার পাওয়া যায় না। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে নিজের সাথে করেই খাবার নিয়ে আসা। সাধারনত শীতের সময় হামহামে পানি কম থাকে। তাই হয়তো আমরা হামহামের আসল রুপ দেখতে পারিনি। তবে ঝিরি পথে হেঁটে যাওয়াটা অনেক বেশী উপভোগ্য ছিলো। 



চূড়া থেকে হামহাম


ফিরতি পথে আমার পাহাড়ি পথে দিয়ে ফিরে আসি। এ পথে একটু কষ্ট কম। কিন্তু কম সময়ে ফিরে আসা যায়। যাওয়া সময় যে সিএনজি যে যাবেন এই সিএনজিতেই আপনাকে ফিরে আসতে হবে। সেই সিএনজি আপনার জন্য অপেক্ষা করবে।

ট্যুরের সব ছবি দেখতে চাইলে আমার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখতে পারেন মিশন হামহাম




Comments

Popular posts from this blog

নৈসর্গিক সৌন্দযের নাফাখুম ঝর্ণা