নৈসর্গিক সৌন্দযের নাফাখুম ঝর্ণা
ভ্রমনের জন্য আমরা সব সময় আমার সবচে পচন্দের জায়গা বান্দারবান। যতবারই এখানে যাই ততবারই নতুন করে বান্দারবানের প্রেমে পড়ি। গত আট মাসে দুইবার বান্দারবান যাবার পারও নতুন করে আবার প্ল্যান করি বান্দারবান যাবার। যাথে ছিলো বন্ধু একং এলাকার ছোট ভাইরা। নাফাকুম নিয়ে সবার মাঝে একটা আগ্রহ ছিলো। তাই এভাবের নাফাখুম যাবার জন্যই আমরা প্ল্যান করি। আজকে যানাবো নাফাখুম ট্যুরের বিস্তারিত।
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। বান্দারবান থানচি উপজেলার রেমাক্রি একটি মারমা অধু্যসিত এলাকা। বান্দরবন হতে ৭৯ কিঃমিঃ দুরে অবস্থিত থানচি। সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার। এই সাঙ্গু ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে। কারণ নদীটি রেমাক্রী হতে থানচির দিকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে এসেছে এবং এই জন্য এখানে অনেক স্রোত থাকে। নদীর কিছুদূর পর পর ১-২ ফুট এমন কি কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। নদীর দুপাশে সবুজে মোড়ানো উচু উচু পাহাড় রয়েছে। কোন কোন পাহাড় এতই উচু যে তার চূড়া ঢেকে থাকে মেঘের আস্তরে। সবুজে ঘেরা সে পাহাড়ে মাঝে মাঝে দু একটি উপজাতী বসতঘর দেখা যায়। পাহাড়ের ঢালুতে টিন আর বেড়ার ঘর গুলো মারমা ভাষায় বলে ‘খুম’ মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ দূরত্বে এই জলপ্রপাত।
নাফাখুম ঝর্ণা |
ঢাকা টু বান্দারবান, থানচি
ঢাকার আরামবাগ, কমলাপুর, শ্যামলি থেকে সরাসরি বান্দারবান যাওয়া যাবে। শ্যামলি পরিবহন, হানিফ পরিবহন, ইউনিক, দেশ ট্রাভেল্স, ঈগল পরিবহনে করে বান্দারবান যেতে পারবেন। রাত সাড়ে আটটা থেকে শুরু করে রাত বারোটা পর্যন্ত বান্দারবানের বাস ছাড়ে। সাধারনত বারোটার বাসে রউনা দিলে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মাঝে বান্দারবান পৌছে যাবেন। নাফাখুম যাবার পথে আপনাকে লম্বা জার্নি করতে হবে। তাই বান্দারবান নেমেই নাস্তা সেরে নিতে হবে। তারপর চান্দের গাড়ীতে করে থানচিতে যেতে হবে। থানচি যেতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে। থানচিতে গিয়ে আপনাকে গাইড নিতে হবে। এরপর থানচি থানা এবং বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে।
ঢাকার আরামবাগ, কমলাপুর, শ্যামলি থেকে সরাসরি বান্দারবান যাওয়া যাবে। শ্যামলি পরিবহন, হানিফ পরিবহন, ইউনিক, দেশ ট্রাভেল্স, ঈগল পরিবহনে করে বান্দারবান যেতে পারবেন। রাত সাড়ে আটটা থেকে শুরু করে রাত বারোটা পর্যন্ত বান্দারবানের বাস ছাড়ে। সাধারনত বারোটার বাসে রউনা দিলে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মাঝে বান্দারবান পৌছে যাবেন। নাফাখুম যাবার পথে আপনাকে লম্বা জার্নি করতে হবে। তাই বান্দারবান নেমেই নাস্তা সেরে নিতে হবে। তারপর চান্দের গাড়ীতে করে থানচিতে যেতে হবে। থানচি যেতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে। থানচিতে গিয়ে আপনাকে গাইড নিতে হবে। এরপর থানচি থানা এবং বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে।
থানচি থেকে আপনাকে নৌকা ভাড়া নিতে হবে। বর্ষা কালে এক নৌকাতে ৬-৮ জনও যাওয়া যায়। কিন্তু শৌতকালে নদীতে পানি কম থাকে। তাই সাধারনত এক নৌকাতে ৩-৮ জনের বেশী নেয় না। এইটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। লোক সংখ্যা বেশী হলে নৌকার সংখ্যাও বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ট্যুরের খরচও বেড়ে যাবে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে দুপুর তিনটার পর থানচি থেকে আর কোন নৌকা রেমাক্রির উদ্দেশে ছেড়ে যায়না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থানচিতে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিতে হবে।
পরের দিন খুব ভোরেই নাফাখুমের উদ্দেশ্য রওনা দিতে হবে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমি পড়াই ভালো। মনে রাখতে হবে আপনি যত ভোরে নাফাখুমের উদ্দেশ্য রওনা দিবেন তত বেশী সময় আপরি নাফাখুমে কাটাতে পারবেন। এই একটু ভোরেই রওনা করা উচিত।
রেমাক্রি টু নাফাখুম
আমাদের লক্ষ্য ছিলো সেদিন আমার সবার আগে নাফাখুম যাবো। তাই সবাই ভোর সাড়ে চারটায় উঠেই তৈরী। আমরা ঠিক ভোর পাঁচটায় নাফাখুমের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। তখনো ভোরের আলো ফুটেনি। অন্ধকারেই আমাদের যাত্রা শুরু হলো। আমাদের গাইড আমাদের পথ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। যেহেতু অন্ধাকার তাই কয়েকজনের হাতে লাইট ছিলো। এইটা খুবি দরকার জিনিস। তাই বান্দারবান আসার আগে সবাই মনে করে সাথে লাইট নেয়া উচিত।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আমরা আমাদের মতো পথ চলছি। যে সব দর নাফাখুম যারা জন্য এসেছে তাদের মধ্যে আমারাই সবার আগে রওনা দেই। সাঙ্গু নদীর দুপাশ ধরে আমরা হাটতেছি আধো আলো আধো অন্ধকারে। পাহাড়ি মানুসরা খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে। এখানেও তার ব্যাতিক্রম নয়। ভোর হতেই নদীর পাশে আমরা একটা দোকান দেখতে পাই। সেখানে যে যার মতো সকালের নাস্তা করে নেই। এখানে নাস্তা বলতে পরোট, ডিম ভাজা, কলা আর নানান রকমের বিস্কুট পাওয়া যাবে। প্রয়োজন মতো খেয়ে নিতে হবে। কারন সামনে আর কোন দোকান পাওয়া যাবেনা।
নাস্তা শেষ করেই আমার আমার যাত্রা শুরু করলাম। আনুমানিক আরো দেড় ঘন্টা হাটার পর আমমরা পৌছে গেলাম স্বপ্নের নাফাখুমে। এর মাঝে ছবি তোলার জন্য চমৎকার কিছু লোকেশন পাবেন। সেখানে ইচ্ছা মতো ছবি তুলে নিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে ছবি তোলার পেছনে সময় নষ্ট করে নাফাখুমে পৌছাতে দেরী হয়ে যাবে।
সাঙ্গু নদীর পাড়ে বারবিকিউ সাথে ক্যাম্পফায়ার |
নাফাখুমের পথে |
আমাদের লক্ষ্য ছিলো সেদিন আমার সবার আগে নাফাখুম যাবো। তাই সবাই ভোর সাড়ে চারটায় উঠেই তৈরী। আমরা ঠিক ভোর পাঁচটায় নাফাখুমের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। তখনো ভোরের আলো ফুটেনি। অন্ধকারেই আমাদের যাত্রা শুরু হলো। আমাদের গাইড আমাদের পথ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। যেহেতু অন্ধাকার তাই কয়েকজনের হাতে লাইট ছিলো। এইটা খুবি দরকার জিনিস। তাই বান্দারবান আসার আগে সবাই মনে করে সাথে লাইট নেয়া উচিত।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আমরা আমাদের মতো পথ চলছি। যে সব দর নাফাখুম যারা জন্য এসেছে তাদের মধ্যে আমারাই সবার আগে রওনা দেই। সাঙ্গু নদীর দুপাশ ধরে আমরা হাটতেছি আধো আলো আধো অন্ধকারে। পাহাড়ি মানুসরা খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে। এখানেও তার ব্যাতিক্রম নয়। ভোর হতেই নদীর পাশে আমরা একটা দোকান দেখতে পাই। সেখানে যে যার মতো সকালের নাস্তা করে নেই। এখানে নাস্তা বলতে পরোট, ডিম ভাজা, কলা আর নানান রকমের বিস্কুট পাওয়া যাবে। প্রয়োজন মতো খেয়ে নিতে হবে। কারন সামনে আর কোন দোকান পাওয়া যাবেনা।
গাইড সহ আমাদের পুরো টীম |
নাফাখুমের পথে |
নাফাখুমের পথে |
নাফাখুমের পথে |
নাফাখুমে অবশ্যই সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। কারন এখানকার পাথর খুব পিচ্ছিল হয়। একটু অসাবধানতার কারনে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যারা সাতার পারেন তারা চাইলেই পানিতে গোসল করতে পারনে।
নাফাখুম থেকে ফিরে চাইলেই রেমাক্রিতে থাকতে পারেন। তবে এখানে আর দেখার মতো বিশেষ কিছু নেই। তারচেয়ে ভালো থানচিতে ফিরে আসা। আমরা থানচিতে একরাত ছিলাম। এখানে 'থানচি কুটির' নামে কটেজ আছে। সবাই মিণে আনন্দ করে রাত কাটানোর জন্য থানচি কুটির আদর্শ জায়গা।
ভ্রমন রিভিউ:
চাইলেই তিন দিনেই খুব আরামেই নাফাখুম ঘুরে আসা যায়।
রাতে ঢাকা থেকে রওনা হলে সকালে পৌছবেন বান্দরবন। যদি প্রাইভেট জীপে (চান্দের গাড়ী) বান্দরবন থেকে থানচি যান এবং ইঞ্জিন বোটে থানচি থেকে রেমাক্রি যান তাহলে ৩ দিনে নাফাখুম ঘুরে আসতে পারবেন।
দিন - ১ (বান্দরবান থেকে রেমাক্রি)
সকাল ৭.০০ টায় বান্দরবান থেকে রওনা হলে থানচি বাজার পৌছবেন দুপুর ১১ টায়। থানচি বাজার থেকে রেমাক্রি বাজার ইঞ্জিন নৌকায় সময় লাগবে ৫ ঘন্টা, দুপুর ১২.৩০ টার মধ্যে নৌকা ছাড়তে পারলে সন্ধ্যার মধ্যে রেমাক্রি পৌছতে পারবেন। এখানে মনে রাখতে হবে শীতের দিনে বিকাল তিনটার পর আর কোন নৌকা ছাড়ে না।
দিন - ২ (রেমাক্রি থেকে নাফাখুম)
নাফাখুম যেতে আলাদা গাইড নিতে হবে। পাহাড়ী খালের পথে হেটে যেতে মোট সময় লাগবে = যাওয়া ২.৩০ ঘন্টা + আসা ২.৩০ ঘন্টা + থাকা ২ ঘন্টা = মোট ৭ ঘন্টা।
দিন - ৩ (নাফাখুম থেকে বান্দরবন)
রেমাক্রি থেকে থানচি তারপর বাসে বান্দরবন, রাতের বাসে ঢাকা চলে আসতে পাড়েন অথবা আরো একদিন সময় থাকলে বান্দরবনের আশে পাশে ঘুরে দেখতে পাড়েন।
দিন - ১ (বান্দরবান থেকে রেমাক্রি)
সকাল ৭.০০ টায় বান্দরবান থেকে রওনা হলে থানচি বাজার পৌছবেন দুপুর ১১ টায়। থানচি বাজার থেকে রেমাক্রি বাজার ইঞ্জিন নৌকায় সময় লাগবে ৫ ঘন্টা, দুপুর ১২.৩০ টার মধ্যে নৌকা ছাড়তে পারলে সন্ধ্যার মধ্যে রেমাক্রি পৌছতে পারবেন। এখানে মনে রাখতে হবে শীতের দিনে বিকাল তিনটার পর আর কোন নৌকা ছাড়ে না।
দিন - ২ (রেমাক্রি থেকে নাফাখুম)
নাফাখুম যেতে আলাদা গাইড নিতে হবে। পাহাড়ী খালের পথে হেটে যেতে মোট সময় লাগবে = যাওয়া ২.৩০ ঘন্টা + আসা ২.৩০ ঘন্টা + থাকা ২ ঘন্টা = মোট ৭ ঘন্টা।
দিন - ৩ (নাফাখুম থেকে বান্দরবন)
রেমাক্রি থেকে থানচি তারপর বাসে বান্দরবন, রাতের বাসে ঢাকা চলে আসতে পাড়েন অথবা আরো একদিন সময় থাকলে বান্দরবনের আশে পাশে ঘুরে দেখতে পাড়েন।
নাফাখুমের খরচ:
৬ জনের একটা গ্রুপ বান্দরবান থেকে নাফাখুম ঘুরে আসতে সম্ভাব্য খরচ।
থানচি পর্যন্ত চান্দের গাড়ি এবং রেমাক্রি পর্যন্ত ইঞ্জিন বোট, ৩ দিন ভ্রমনের সম্ভাব্য খরচ ৩০০০ টাকা
বান্দরবন থেকে থানচি জীপ ভাড়া = ৪০০০ টাকা
থানচি থেকে রেমাক্রি ইঞ্জিন বোট = ৫০০০ টাকা
গাইড প্রতিদিন ৫০০ করে ৩ দিন = ১৫০০ টাকা
গাইড রেমাক্রি থেকে নাফাখুম ১ দিন = ৫০০ টাকা
থাকা খাওয়া প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে ৬ জন ৩ দিন = ৩০০*৬*৩= ৫৪০০ টাকা
থানচি থেকে নামদরবন ফিরে আসতে বাস ভাড়া = ২০০*৬ = ১২০০ টাকা
মোট = ১৭৬০০ টাকা
জন প্রতি = ১৭৬০০/৬ = ২৯৩৩ টাকা।
থানচি পর্যন্ত পাবলিক বাস এবং বাকী পথ নৌকা, ৪ দিনের ভ্রমনে সম্ভাব্য খরচ ২৫০০ টাকা
বান্দরবন থেকে থানচি বাস ভাড়া = ২০০*৬ = ১২০০ টাকা
থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকা ৪ দিন = ১০০০*৪ = ৪০০০ টাকা
গাইড প্রতিদিন ৫০০ করে ৪ দিন = ২০০০ টাকা
গাইড রেমাক্রি থেকে নাফাখুম ১ দিন = ৫০০ টাকা
থাকা খাওয়া প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে ৬ জন ৩ দিন = ৩০০*৬*৩= ৫৪০০ টাকা
থানচি থেকে বান্দরবন ফিরে আসতে বাস ভাড়া = ২০০*৬ = ১২০০ টাকা
মোট = ১৪৩০০ টাকা
জন প্রতি = ১৪৩০০/৬ = ২৩৮৩ টাকা।
(এর বাহিরে যদি থানচি তে রাত কাটে চান তাহলে জন প্রতি ১২০-১৩০ টাকা কটেজ ভাড়া লাগবে।)
পরামর্শ:
বান্দারবানের মতো একটা জায়গায় ভালো ভাবে ট্যু শেষ করার জন্য একজন ভালো গাইড খুবি গুরুত্বপূর্ন। যদি বাজে গাইড পরে তাহলে পুরো ট্যুরটাই মাটি। তাই যদি পরিচিত কারো মাধ্যমে গাইড নিতে পাররে খুবি ভালো। সব সময় সাথে রাখতে হবে মশা প্রতিরোধক ক্রীম, কয়েক জোড়া মোজা, প্যারাসিটেমল জাতিয় ঔষধ, এন্টিসেপ্টিক ক্রীম, খাবার স্যালাইন, কলম, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ম্যাচ, শুকনো খাবার ও পানি।
Comments
Post a Comment